জিহাদের মাধ্যমে জান্নাত ওয়াজিব এবং জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়:
মুআয বিন জাবাল রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
মুআয বিন জাবাল রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ
قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ
وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ، وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ
نُكِبَ نَكْبَةً، فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ القِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا
كَانَتْ لَوْنُهَا الزَّعْفَرَانُ وَرِيحُهَا كَالمِسْكِ.
“যে মুসলিম ব্যক্তি উটনী দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
যে আল্লাহর রাস্তায় আঘাতপ্রাপ্ত হবে অথবা কোন কষ্ট পাবে, তা (অর্থাৎ উক্ত
আঘাত ও কষ্টের চিহ্ন) কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে সামনে আসবে; যার রঙ হবে
জাফরানের রঙ্গের মত এবং ঘ্রাণ হবে মিশকের ঘ্রাণের মত।”[1]মু’য়ায রাদি. থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে,
“যে মুসলিম ব্যক্তি উটনী দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
যে আল্লাহর কাছে মন থেকে সত্যিকার অর্থে শাহাদত চাইবে, অতঃপর সে
(স্বাভাবিকভাবে) মারা যাক বা শহীদ হোক, তার জন্য শহীদের মর্যাদা রয়েছে।
مَنْ
قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فَوَاقَ
نَاقَةٍ، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَمَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْقَتْلَ مِنْ
عِنْدِ نَفْسِهِ صَادِقًا ثُمَّ مَاتَ أَوْ قُتِلَ، فَلَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ،
وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً،
فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ، لَوْنُهَا
كَالزَّعْفَرَانِ وَرِيحُهَا كَالْمِسْكِ، وَمَنْ جُرِحَ جُرْحًا فِي
سَبِيلِ اللَّهِ فَعَلَيْهِ طَابَعُ الشُّهَدَاءِ.
যে আল্লাহর রাস্তায় আঘাতপ্রাপ্ত হবে অথবা কোন কষ্ট পাবে, তা (উক্ত আঘাত ও
কষ্টের চিহ্ন) কিয়ামতের দিন আরো বেশি হয়ে সামনে আসবে; যার রঙ হবে জাফরানের
রঙ্গের মত এবং ঘ্রাণ হবে মিশকের ঘ্রাণের মত। যে আল্লাহর রাস্তায় কোন আঘাত
পাবে, তার উপর শহীদদের ছাপ থাকবে।”[2]
আব্দুল্লাহ ইবনুল ফাকীহ রাদি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“শয়তান
আদম সন্তানের সকল রাস্তা আটকে বসে থাকে। সে ইসলামের রাস্তা আটকে বসে এবং
বলে, তুমি ইসলাম গ্রহণ করে তোমার ও বাপ-দাদাদের ধর্ম ছেড়ে দিবে? আদম সন্তান
তার কথা না শুনে ইসলাম গ্রহণ করে। পরে সে হিজরতের রাস্তা আটকে বসে এবং
বলে, তুমি তোমার মাটি ও আকাশ ছেড়ে চলে যাবে? আর মুহাজিরের উদাহরণ হচ্ছে,
রশীতে বাঁধা ঘোড়ার মত।
إِنَّ
الشَّيْطَانَ قَعَدَ لِابْنِ آدَمَ بِأَطْرُقِهِ، فَقَعَدَ لَهُ بِطَرِيقِ
الْإِسْلَامِ، فَقَالَ: تُسْلِمُ وَتَذَرُ دِينَكَ وَدِينَ آبَائِكَ
وَآبَاءِ أَبِيكَ، فَعَصَاهُ فَأَسْلَمَ، ثُمَّ قَعَدَ لَهُ بِطَرِيقِ
الْهِجْرَةِ، فَقَالَ: تُهَاجِرُ وَتَدَعُ أَرْضَكَ وَسَمَاءَكَ،
وَإِنَّمَا مَثَلُ الْمُهَاجِرِ كَمَثَلِ الْفَرَسِ فِي الطِّوَلِ،
فَعَصَاهُ فَهَاجَرَ، ثُمَّ قَعَدَ لَهُ بِطَرِيقِ الْجِهَادِ، فَقَالَ:
تُجَاهِدُ فَهُوَ جَهْدُ النَّفْسِ وَالْمَالِ، فَتُقَاتِلُ فَتُقْتَلُ،
فَتُنْكَحُ الْمَرْأَةُ، وَيُقْسَمُ الْمَالُ، فَعَصَاهُ فَجَاهَدَ، "
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَمَنْ فَعَلَ
ذَلِكَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُدْخِلَهُ
الْجَنَّةَ، وَمَنْ قُتِلَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ
يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَإِنْ غَرِقَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ
يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، أَوْ وَقَصَتْهُ دَابَّتُهُ كَانَ حَقًّا عَلَى
اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ»
আদম সন্তান তার কথা না শুনে হিজরত করে। অতঃপর
জিহাদের রাস্তা আটকে বসে এবং বলে, তুমি জিহাদ করবে, অথচ তা জান ও মালের
জন্য কত কষ্টকর? তুমি যুদ্ধ করলে মারা যাবে, স্ত্রীকে অন্য কেউ বিয়ে করে
নিবে, সকল সম্পদ ভাগ-ভাটোরা নিয়ে যাওয়া হবে! আদম সন্তান তার কথায় কান না
দিয়ে জিহাদ করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে এতটুকু
করতে পারবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; (স্বাভাবিক)
মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পানিতে ঢুবে
মারা গেলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা আরোহণ থেকে পড়ে
মারা গেলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”[3]
“মুহাজিরের উদাহরণ হচ্ছে, রশিতে বাঁধা
ঘোড়ার মত” উক্ত কথাটি শয়তানের। এ কথা দ্বারা সে মূলত আদম সন্তানকে এ ধোঁকা
দিতে চায় যে, হিজরতের মাধ্যমে মহাজির বন্দীর মত হয়ে যায়; তার বাড়ি ছাড়া
কোথাও যেতে পারে না, তার পরিচিত ছাড়া কারও সাথে মিশতে পারে না।
যেমন ঘোড়াকে
রশিতে বেঁধে মাঠে চড়াতে দিলে সে নির্দিষ্ট একটা জায়গার ভিতরে বন্দি হয়ে
যায়। এর বাহিরে গিয়ে ঘাষ খেতে পারে না। বিপরিতে নিজের বাড়িতে থাকলে ছাড়া
ঘোড়ার মত ইচ্ছামত যেখানে ইচ্ছা, সেখানে যাওয়া যায়।[4]
আবুল মুনযির রাদি. থেকে বর্ণিত,
“এক
ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো, হে
আল্লাহর রাসূল, অমুক ব্যক্তি মারা গেছে। আপনি তার জানাযা পড়েন। উমর রাদি.
বললেন, সে ফাসেক, আপনি তার জানাযা পড়বেন না। উক্ত ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর
রাসূল, আপনি কি জানেন না,যে রাতে আপনি সকাল পর্যন্ত পাহারা দিয়েছেন, সে
উক্ত পাহারাদারী দলে ছিল?
أَنَّ
رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ:
يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ فُلَانًا هَلَكَ فَصَلِّ عَلَيْهِ، فَقَالَ
عُمَرُ: إِنَّهُ فَاجِرٌ فَلَا تُصَلِّ عَلَيْهِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: يَا
رَسُولَ اللهِ أَلَمْ تَرَ اللَّيْلَةَ الَّتِي صَبَّحْتَ فِيهَا فِي
الْحَرَسِ فَإِنَّهُ كَانَ فِيهِمْ؟، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى عَلَيْهِ، ثُمَّ تَبِعَهُ حَتَّى إِذَا جَاءَ
قَبْرَهُ قَعَدَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُ حَثَى عَلَيْهِ ثَلَاثَ
حَثَيَاتٍ، ثُمَّ قَالَ: «يُثْنِي عَلَيْكَ النَّاسُ شَرًّا وَأُثْنِي
عَلَيْكَ خَيْرًا» ، فَقَالَ عُمَرُ: وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟
فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْنَا مِنْكَ يَا
ابْنَ الْخَطَّابِ، مَنْ جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللهِ وَجَبَتْ لَهُ
الْجَنَّةُ»
(এ কথা শুনে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম দাঁড়িয়ে তার জানাযা পড়লেন এবং তার পিছু ছুটলেন। তার কবরে পৌঁছে,
(তাকে কবরস্থ করার জন্য) বসলেন এবং কবরস্থ করা থেকে ফারেগ হয়ে, তিন মুষ্টি
মাটি তার কবরে দিলেন। অতঃপর বললেন, মানুষ তোমার নিন্দা করে আর আমি তোমার
প্রসংশা করি।
উমর রাদি. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কি? রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের ছেলে, আমাকে ছাড়ো। যে
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।”[5]
আমর বিন আবাসা রাদি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
অন্য হাদীসে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فُوَاقَ نَاقَةٍ، حَرَّمَ اللهُ عَلَى وَجْهِهِ النَّارَ
“যে আল্লাহর রাস্তায় উটনী দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ জিহাদ করবে, আল্লাহ তার চেহারার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেন।”[6]অন্য হাদীসে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«لَا يَجْتَمِعُ كَافِرٌ وَقَاتِلُهُ فِي النَّارِ أَبَدًا»
“কাফের এবং তাকে হত্যাকারী জাহান্নামে কখনও একত্র হবে না।”[7][1] জামে তিরমিযী: ১৬৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৭৯২। ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
উল্লেখ্য: ইমাম তিরমিযী রহ. এর উক্ত
হুকুম আহমদ শাকির রহ. এর নূসখায় ছুটে গেছে। মুআসসাতুর রিসালার নূসখায়
বিদ্যমান আছে। ইমাম তিরমিযী রহ. এর উক্ত হুকুম নববী, মুনযিরী, ইবনে দাকীকিল
ঈদ রহ. সহ অনেকে উল্লেখ করেছেন এবং তা সমর্থন করেছেন। -রিয়াযুস সালেহীন:
৩৭১, মুখতাসারে আবু দাউদ: ২/১৫৯, আল-ইকতিরাহ: ১/১২৩
[2]
সুনানে আবু দাউদ: ২৫৪১, সুনানে নাসায়ী: ৩১৪১, মুসনাদে আহমদ: ২২০১৪,
মুসান্নাফে আব্দুর রযযাক: ৫/২৫৫, মুসতাদরাকে হাকিম: ২/৮৭, সুনানে বায়হাকী:
১৮/৫৫৮। উক্ত হাদীস
মূলত আগের হাদীসটি একটু বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাই এটিও সহীহ। এ কারণে
ইবনে দাকীকিল ঈদ রহ. উক্ত হাদীসের হুকুম বর্ণনা করার সময় ইমাম তিরমিযী রহ.
এর উপরোক্ত হুকুম উল্লেখ করেন।
[3]
সুনানে নাসায়ী: ৩১৩৪, মুসনাদে আহমদ: ১৫৯৫৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ:
১০/২৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান: ১০/৪৫৩, শুআবুল ঈমান: ৬/১০৮, মু’জামে কাবীর:
৭/১১৭। ইরাকী রহ. সনদ সহীহ বলেছেন। -তাখরীজুল ইহয়া: ৯০৬
[4] হাশিয়াতুস সিন্দী আলা সুনানি নাসায়ী: ৬/২২
[5] মু’জামে কাবীর: ২২/৩৩৭।
হাইসামী রহ. বলেন, উক্ত সনদে ‘ইয়াযীদ বিন সা’লাব’ নামক এক ব্যক্তি আছেন,
যাকে আমি চিনি না। বাকি সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মুনযিরী রহ. বলেন,
“ইনশাআল্লাহ, হাদীসের সনদে কোন সমস্যা নেই”। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৫/২৭৬, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/১৮৭
[6] মুসনাদে আহমদ: ১৯৪৪৪। উক্ত হাদীসের সনদে ‘আব্দুল আযীয বিন উবায়দুল্লাহ’ নামক একজন বর্ণনাকারী দুর্বল। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৫/২৭৫
[7] সহীহ মুসলিম: ১৮৯১
0 মন্তব্যসমূহ