আমরা কিসের পথে আহবান করবো-
একই ব্যক্তি মসজিদ, মাদ্রাসার সভাপতি আবার তিনি বিভিন্ন কুফর, শির্ক (মূর্তি পূজা, মানব রচিত আইনের প্রতিনিধিত্ব করে) পালনে সহায়তা করে। আর কিছু লোক পাবেন অমুক নেতা/নেত্রী এত রাকাত তাহাজ্জুদ, রোযা, কুরআন পড়ে এসব প্রচার করে নিজের প্রিয় নেতা/নেত্রীকে পরহেজগার প্রচার করার প্রচেষ্টা করেন। অথচ এসকল নেতা/নেত্রী মানব রচিত আইন চাপিয়ে দেয়, চেতনার নামে মূর্তি বানায়, শির্কী অনুষ্ঠান চালু করে।
প্রকৃত মুমিনরা ওদের বিরোধিতা করলে জেল, জুলুম, নির্যাতন করে। আর একদল লোক পাবেন মানুষকে আকীদা না শিখিয়ে শুধু মসজিদ/সালাতের দিকে ডাকে। তাগুতী শাসকগণ তাদের মুনাজাত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। একই শাসক ইসলামী একটা আইন কার্যকরের আন্দোলন করলে ওদের উপর জুলুম, নির্যাতন করে।
মূসা (আঃ) ফেরাউনকে, ইবরাহিম (আঃ) নমরুদকে এবং রাসূল (সাঃ) আবু জাহলদের দাওয়াত দিয়েছেন—‘আসুন সালাত পড়ুন’ বলে নয়, বরং তাঁদের দাওয়াতের মূল বার্তা ছিল তাওহীদের দিকে আহ্বান।
সুরা নাহলে বর্ণিত,
“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।
ইসলামিক ভাষায় তাগুত বলতে বুঝায় আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত বা অনুগত্য করা হয় এবং যে এটা পছন্দ করে সেও তাগুত। বিধানদাতা হিসেবে আল্লাহর পরিবর্তে কাউকে বিধানদাতা ভাবা তাগুত।
যারা এসকল আল্লাহ বিরোধী আইন পরিচালকদের দাওয়াহ দেওয়ার কথা ছিল- তারাই ইজতেমা, মসজিদে অবস্থান নিয়ে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত এসকল তাগুতী শাসকদের নিকট বিচার ফায়সালা চায়।
অথচ কুরআনের নির্দেশ-
মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।(সুরা হুজরাত-১০)
আহ! যারা কুরআনের আইন দ্বারা সমাজে বিচার ফায়সালা করার কথা তারাই মানবরচিত আইনের পরিচালকদের নিকট পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, মামলা করে। যেন আবেদন এমন - মাননীয় ফেরাউন, মাননীয় নমরুদ, মাননীয় আবু জাহেল, মাননীয় হেরাক্লিয়াস আপনারা আমাদের মাধ্যকার সমস্যার সঠিক ফায়সালা করে দেন।
নবী, সাহাবীরা কি বিচার চেয়েছেন নাকি আগে ফেরাউন, নমরুদদের ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান দিয়েছেন? ওরা যদি ইসলাম গ্রহণ করতো রসুলদের নেতৃত্ব মেনে চলতো। নবী-রসুল ও সাহাবীরা নেতৃত্ব দিত বা খলিফা হতো। কারণ ইলম ও আখলাক দিয়ে সর্বোত্তম ব্যক্তি মুসলিমদের শাসক হবে এটাই নিয়ম।
আল্লাহ বলেন-
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফের, জালেম। (সুরা মায়েদাহ- ৪৪, ৪৫)।
সুরা নিসার ৬০ নং আয়াতে বর্নিত- “এবং তারা ফয়সালার জন্য তাগুতের কাছে যেতে চায়, যদিও তারা তাগুতকে প্রত্যাখান করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে। কিন্তু শয়তান তাদের সুদূর বিপথে নিয়ে যেতে চায়।”
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
“তারা তাদের পন্ডিত ও ধর্মগুরুদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছিল।” (সুরা তওবা, আয়াত ৩১)।
যদিও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মগুরুদের সিজদাহ দিত না কিন্তু আল্লাহর আইনের পরিবর্তে তাদের আইন মেনে নিয়েছিল। এভাবেই আল্লাহর বদলে ধর্মগুরুকে বিধানদাতা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। আজও যারা আল্লাহর আইনের বদলে কোন মানবরচিত আইনকে খুশি মনে মেনে নেয় এবং এসব আইন প্রণেতাকে সমর্থন, প্রশংসা, সাহায্য করে তারা এর মাধ্যমে তাগুতের আনুগত্য করছে।
নবী, রসুলরা যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন ব্যতীত মানবরচিত আইন চালু রেখেছিল তাদের বিরোধীতা করতো, ঈমান আনলে জান্নাতের সুসংবাদ ও কুফর, শির্কে অটল থাকলে জাহান্নামের ভয় দেখাতো।
কুরআনে এসেছে –
হে নবী! অবশ্যই (আল্লাহ) আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। (সুরা আহযাব -৪৫)
অন্যত্র বর্নিত হয়েছে ,
‘আর তার কথার চেয়ে কার কথা অধিক সুন্দর যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নেক কাজ করে, আর বলে আমি মুসলিম’ (সূরা ফুসসিলাত-৩৩)।
উম্মাহর না জানার সুযোগ নিয়ে জালেম শাসকগণ তাহাজ্জুদ পড়া পরহেজগার দাবি করে, বহুবছর সালাত না পড়া শাসকও জনগনের কাছে প্রিয় হতে টুপি, পাঞ্জাবি পরে পরহেজগার সাজে। আর দরবারি আলেমগন মুত্তাকী প্রমান করতে সচেষ্ট হয়। তারপর এই শাসকগণ প্রয়োজন ফুরালে আলেমদের উপর জুলুম, নির্যাতন শুরু করে।
বার বার একই ঘটনা ঘটে চলছে, আজও যদি আমরা সাবধান না হই অতীতের চেয়ে হয়তো ভয়াবহ জুলুমের শিকার হতে হবে।
রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ ‘এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’
তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিম গণ।’” (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং. ২০৩৩৫)।
দাজ্জাল মহাবিশ্বের বড় ফেতনা অথচ রসুলুল্লাহ (সাঃ) পথভ্রষ্ট আলেমদের ফেতনাকে এর চেয়ে বেশি ভয় পেতেন?! এর কারণ হল- দাজ্জাল পুরো মানবজাতির জন্য বড় ফেতনা আর দাজ্জালের ফেতনাকালও অল্প সময়কাল থাকবে।
কিন্তু পথভ্রষ্ট আলেমদের ফেতনা দীর্ঘদিন চলতে থাকবে আর মুমিনদের জন্য তারাই বড় ফেতনা। যারা পূর্ব হতে পথভ্রষ্ট আলেমদের অনুসরণ করবে দাজ্জাল আসলে তার ফেতনায় তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
রাসূল (ﷺ) আরও বলেছেনঃ ‘তোমরা জেনে রাখ সব খারাপের মাঝে সবচেয়ে বড় খারাপ হচ্ছে আলেমদের মাঝে যারা খারাপ তারা আর সব ভালোর মাঝে সবচেয়ে ভাল হলো আলেমদের মাঝে যারা ভালো তারা।” (দারেমী হা/৩৭০; মিশকাত হা/২৪৯)।
অর্থাৎ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম মুমিন হল হক্বপন্থী আলেমগণ আর নিকৃষ্ট হল পথভ্রষ্ট আলেমগণ।
এছাড়াও রয়েছে –
যে রাজা-বাদশার নিকট আসা-যাওয়া করে সে ফিতনায় নিপতিত হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ ২৮৫৯, মান: সহিহ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন,
আমার উম্মাতের কতক লোক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করবে, তারা কুরআন পড়বে এবং বলবে, আমরা শাসকদের নিকট যাবো তাদের নিকট থেকে পার্থিব স্বার্থ প্রাপ্ত হবো এবং আমাদের দ্বীন থেকে তাদের সরিয়ে রাখবো। এরূপ কখনো হতে পারে না। যেমন কাঁটাদার গাছ থেকে ফল আহরণের সময় হাতে কাঁটা ফুটবেই, তদ্রূপ তারা তাদের কাছে গিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে না। মুহাম্মাদ ইবনুস সাব্বাহ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ গুনাহ ব্যতীত তারা কিছুই লাভ করতে পারে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৫৫, মিশকাত ২৬২, মিশকাত হা/২৪৫, মিশকাতুল মাসাবিহ ৬৩)
0 মন্তব্যসমূহ