আল ওয়ালা ওয়াল বারা বনাম ইন্টারফেইথ - ১পর্ব
“ আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন বা আন্তঃধর্মীয় ব্যানারের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া লোকেরা সাধারণত দুই ধরণের হয়ঃ
১) এমন লোক, যারা দাওয়াহকে ভালোবাসে, ইসলাম প্রচার করতে ভালোবাসে; কিন্তু তারা দ্বীনের ব্যাপারে অজ্ঞ।
অজ্ঞতার কারণে মনে করে আন্তঃধর্মীয় কাজকর্ম দিয়ে ইসলামের প্রচার করা যাবে।
এই ধরণের লোকদের উচিত দাওয়াতী কাজ থেকে কিছুদিন বিরতি নিয়ে আগে ভালোভাবে ইসলাম শেখা।
না হলে তারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে থাকবে এবং সওয়াব তো দূরে থাক, দিন দিন তাদের পাপের বোঝা ভারী হতে থাকবে।
মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা ইন্টারফেইথের প্রবক্তা, যারা আন্তঃধর্মীয় প্ল্যাটফর্মে সভা সমিতিতে অংশগ্রহণ করে; তারা ইসলামের ব্যাপারে জাহেল, অজ্ঞ।
এরা মনে করে আন্তঃধর্মীয় কাজকর্ম দিয়ে ইসলাম আর দাওয়াহর বিশাল খেদমত করে ফেলেছে। বিশাল কিছু অর্জন করেছে। আসলে এই কুল ওকূল হারানো ছাড়া আর কিছুই তারা অর্জন করতে পারেনি। তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবার দুর্ভাগ্য অর্জন করেছে।
এই লোকগুলো ইন্টারফেইথ এবং দাওয়াহকে গুলিয়ে ফেলে। এই দুইয়ের মধ্যেকার পার্থক্য তারা ধরতে পারে না। ইন্টারফেইথ বা আন্তঃধর্মীয় কার্যক্রমের ইতিহাস সম্পর্কেও এরা অজ্ঞ।
ইহুদি-খ্রিস্টানদের মধ্যে কিভাবে এসব কর্মকান্ড শুরু হয়েছিল, তাদের এজেন্ডা কি ছিল, তারপর কিভাবে কিছু কথিত মুসলিম এর প্রচারণা শুরু করলো – এইগুলো তারা জানে না।
তাদেরকে ইন্টারফেইথের ইতিহাস জিজ্ঞাসা করুন, দেখবেন তারা বলতে পারছেনা।
২) দ্বিতীয় শ্রেনী হল ঐসব লোকেরা, যারা জেনে বুঝে আন্তঃধর্মীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে, প্রচার করে, পৃষ্ঠপোষকতা করে।
এই লোকগুলো ইন্টারফেইথের ইতিহাস জানে, এর আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কেও এরা অবগত। অথবা এরা এর কিছু দিক সম্পর্কে জানে, এবং সেই উদ্দেশ্যে বিশ্বাস করে।
এরা হল বর্তমান সময়ে এই উম্মাহর মুনাফিক।
তারা ইন্টারফেইথের আদর্শের ওপর ঈমান এনেছে এবং দ্বীন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার প্রচার রোধে ইসলামের শত্রুদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করছে।
তারা দ্বীন ইসলামের এমন এক সংস্করণ চায়, যা নিয়ে ইসলামের শত্রুরা সন্তুষ্ট।
কোনমতেই ইন্টারফেইথের আদর্শ বা কর্মকান্ড গ্রহণ করা যাবে না। ইন্টারফেইথ একটা কুফরি মতবাদ।
অন্যদিকে দাওয়াহ হল আমাদের নবী
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসৃত পদ্ধতি।
ইন্টারফেইথ এবং দাওয়াতকে এক মনে করার মানে হল একটা তাজা আপেল আর একটা পঁচা কমলালেবুকে এক মনে করা।
আবু ওয়াফা ইবনু আকিল (রহঃ) এর ওয়ালা এবং বারাহ নিয়ে তাঁর অসাধারণ একটি উক্তি রয়েছে।
তিনি বলেন,
‘কোন যুগে ইসলামের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে চাইলে মসজিদের দরজায় ভিড় করা মুসল্লীদের সংখ্যা গণনা করো না, হজ্জের সময় লাব্বাইকের ধ্বনির দিকেও তাকিও না;
বরং তুমি দেখ - তাদের ওয়ালা এবং বারাহর অবস্থা কি!’
ইসলামের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় ওয়ালা এবং বারাহর উপর ঐ যুগের মুসলিমরা কেমন আমল করছে, সেটা দেখে।
ওয়ালা এবং বারাহ হল একটি লিটমাস টেস্ট।
ওয়ালা এবং বারাহ এর মূল বিষয়টি অত্যন্ত সহজসরল। বিদআতি গোষ্ঠী বিশেষ করে দার্শনিক ফিরকার লোকেরা তাদের ভ্রান্ত ধ্যানধারণা প্রচার করার আগে এই বিষয়ে আলোচনাও সহজ সরল ছিল। আলিমগণ সংক্ষেপে সহজ সরলভাবে তা ব্যাখ্যা করতেন।
কিন্তু এখন মডার্নিস্টরাসহ বিভিন্ন ধরণের বাতিল লোকেরা এই বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ”
- শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফিজাহুল্লাহ
0 মন্তব্যসমূহ