খেলাফতের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিত্তিসমূহ
পশ্চিমা শাষননীতি ও ইসলামী খেলাফতের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। ইসলামী খিলাফত যে সমস্ত আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত তা সংক্ষিপ্ত আকারে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হবে।
১ - একত্ববাদের বিশ্বাস
ইসলামের দেয়া রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আল্লাহ প্রদত্ত তাউহীদের বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ-
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولا أَنِ
اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى
اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُوا فِي
الأرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴾
আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। (নাহালঃ ৩৬)
২ - গাইরুল্লাহর গোলামী থেকে মুক্তি
ইসলাম প্রদত্ত শাষন-ব্যবস্থা এই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত যে, তারা মানুষকে মানুষের গোলামী ও আনুগত্য, বরংচ আল্লাহ তায়ালা ছাড়া সমস্ত কিছু গোলামী থেকে মুক্ত করবে। কুরআনে হুদ আলাইহিস সালাম এর আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ
إِنْ نَقُولُ إِلا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا
بِسُوءٍ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا
تُشْرِكُونَ، مِنْ دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لا
تُنْظِرُونِي،إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا
مِنْ دَابَّةٍ إِلا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ
مُسْتَقِيمٍ
বরং আমরাও তো বলি যে, আমাদের কোন দেবতা তোমার উপরে শোচনীয় ভূত চাপিয়ে দিয়েছে। হুদ বললেন-আমি আল্লাহকে সাক্ষী করেছি আর তোমাও সাক্ষী থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক নাই তাঁদের সাথে যাদের কে তোমরা শরিক করছ; তাকে ছাড়া, তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর আমাকে কোন অবকাশ দিও না। আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার পালকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই। (হুদঃ ৫৪-৫৬)
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আলোচনায় এসেছেঃ
قَدْ كَانَتْ
لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ
قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ
دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ
الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে।
তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর
পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের
মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও
আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। (মুমতাহিনাহঃ ৪)৩ - বন্দেগী একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই
ইসলামের দেয়া বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ন ভিত্তি হচ্ছে, সমস্ত ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই করা হবে। আর ইহার আবশ্যকীয় দাবী হচ্ছে ভালবাসার মাপকাঠিও একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই হবেন। এবং আল্লাহ তায়ালার সামনেই সম্পূর্ন ভাবে অক্ষমতা ও দুর্বলতাকে গ্রহন করে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَمِنَ النَّاسِ
مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ
اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।(বাকারাহঃ ১৬৫)
আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেনঃ
قُلْ إِنَّنِي
هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ
إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ،قُلْ إِنَّ صَلاتِي
وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ،لا شَرِيكَ
لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ،قُلْ أَغَيْرَ
اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ وَلا تَكْسِبُ كُلُّ
نَفْسٍ إِلا عَلَيْهَا وَلا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ثُمَّ إِلَى
رَبِّكُمْ مَرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ
تَخْتَلِفُونَ
আপনি বলে দিনঃ আমার প্রতিপালক
আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করেছেন একাগ্রচিত্ত ইব্রাহীমের বিশুদ্ধ ধর্ম। সে
অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং
আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই।
আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। আপনি বলুনঃ আমি কি আল্লাহ
ব্যতীত অন্য প্রতিপালক খোঁজব, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি
কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।
অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর
তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে। (আন'আমঃ
১৬১-১৬৪)৪ - প্রতিনিধিত্ব এবং স্থলাভিষিক্ততা নাকি কর্তৃত্ব প্রয়োগ
ইসলামের দেয়া পদ্ধতির মূল ভিত্তি এই কথার উপর প্রতিষ্ঠিত যে, সমস্ত বাদশাহের মালিক আল্লাহ তায়ালা আদম আলাইহিস সালাম এবং তার সন্তানদেরকে জমীনে খালিফা এবং নায়েব হিসেবেই প্রেরন করেছেন (বাস্তবিক হাকেম হিসেবে নয়)। ইরশাদ করছেনঃ
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأرْضِ خَلِيفَةً
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি।(বাকারাহঃ ৩০)অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا دَاوُدُ إِنَّا
جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الأرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ
وَلا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। (সাদঃ ২৬)
৫ - জীবনের উদ্দ্যেশ্য, আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের মাধ্যমে আখেরাতের সফলতা অর্জন করা
ইসলামের দেয়া জীবন বিধানের আরো একটি মূল ভিত্তি হচ্ছে; মানুষকে সৃষ্টিই করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত ও বন্দেগী করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإنْسَ إِلا لِيَعْبُدُونِ
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (জারিয়াতঃ৫৬)এই জীবন বিধানের ভিত্তিই এটা যে, এই ধারকৃত হায়াতের মধ্যে আমাদের মূল উদ্ধ্যেশ্যই হবে, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও আখেরাতের সফলতা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ-
﴿ كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ
الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ
زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا
الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلا مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। (আলে-ইমরানঃ ১৮৫)
৬ - হিসেব নেয়ার অধিকার একমাত্র ... আল্লাহ তায়ালার।
ইসলামের দেয়া জীবন বিহান এই বিশ্বাষের উপর প্রতিষ্ঠিত যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের সমস্ত চলা-ফেরা ও আশা-আকাঙ্খার প্রতিদান দিবেন। এই হিসেবে বলেছেনঃ-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا
الإنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ
إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ،إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ
الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ،مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلا
لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন
নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত
ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ
করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত
প্রহরী রয়েছে। (ক্বাফঃ ১৬-১৮)সুতরাং মানুষ যদিও মানুষের বানানো আদালতে গ্রেফতারী বা সাজা থেকে বেঁচেও যায়; তথাপিও আখেরাতে আল্লাহর আদালতের ফায়সালা ও সেখানের সাস্তি থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَقُلِ اعْمَلُوا
فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ وَسَتُرَدُّونَ
إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ
تَعْمَلُونَ
আর তুমি বলে দাও, তোমরা আমল করে যাও,
তার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রসূল ও মুসলমানগণ।
তাছাড়া তোমরা শীগ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও
প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে। (তাওবাঃ
১০৫)৭ - উম্মাতে মুসলিমার মূল জিম্মাদারী, দ্বীনের আহ্বান সবার কাছে পৌঁছে দেয়া
ইসলামী জীবন ব্যবস্থার এই একটি মূল দিক হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। এবং ইহার উপর প্রমান প্রতিষ্ঠা করা উম্মাতের দ্বায়িত্ব।
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী
সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং
যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। (বাকারাহঃ ১৪৫)৮ - দাওয়াতের প্রসার ও ফিতনা নিঃশেষ করার জন্য জিহাদ ও ক্বিতাল
ইসলামের দেয়া জীবন বিধানের পিছনে এই চিন্তা খুব গুরুত্বপূর্ন যে, উম্মাতে মুসলিমাহ রবের পয়গাম মানুষের নিকট পৌঁছাবে এবং তার বিধানের বিজয়ের জন্য জিহাদ ও ক্বিতাল করবে। যাতে করে ফেতনা শেষ হয়ে যায় এবং দ্বীন পরিপূর্ন ভাবেই একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। এই জন্যই কুরআনে বলেছেনঃ-
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। (আনফালঃ ৩৯)৯ - শরিয়াতের শাষন, ইনসাফ, শূরা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ইসলামী পদ্ধতি
উম্মাতে মুসলিমাহ আল্লাহর শরিয়াতের শাসনের সুন্দর ভিত্তির উপর রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন, ন্যায় ও ইনসাফের বাস্তবায়ন, শুরার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ফরজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইবাদাত করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
الَّذِينَ إِنْ
مَكَّنَّاهُمْ فِي الأرْضِ أَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ
وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ
الأمُورِ
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে
শক্তি-সামর্থবান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও
অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।
(হাজ্জঃ ৪১)যখন শরিয়াত বাস্তবায়িত হতে থাকবে তো আল্লাহ তায়ালা এর ফলে জমিনের বুকে বারাকাহ নাজিল করতে থেকবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالأرْضِ
আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত
এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত
সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। (আ'রাফঃ ৯৬)হ্যাঁ, এই বিষয়টা ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে যে, উম্মাতে মুসলিমাহ যখনই এই ধরনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন, তা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত মনে করে আল্লাহ তায়ালার খুশির জন্যেই করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ
آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي
الأرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ
لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ
بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا
وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে,তারাই অবাধ্য। (নুরঃ ৫৫)
অন্যত্র বলেছেনঃ
إِنِ الْحُكْمُ إِلا
لِلَّهِ أَمَرَ أَلا تَعْبُدُوا إِلا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ
وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لا يَعْلَمُونَ
আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা
নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল
পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (ইউসুফঃ ৪০)১০ - দেশাত্ববোধ ও জাতীয়তাবাদের গোঁড়ামি থেকে মুক্তি
ইসলামের দেয়া খেলাফাহ ব্যবস্থা মানুষের সামনে এমন এক উদাহারণ পেশ করেছে, যেখানে সব ধরনের দেশীয় সম্পর্ক এবং ভূগলিক সীমানা থেকে মুক্ত হয়ে সমস্ত ঈমানদারদের মধ্যে ঈমানী ভ্রাতৃত্তের ভিত্তির উপর সমতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন। (মুমিনুনঃ ৫২১১ - মর্যাদার মাপকাঠি ...... ঈমান, ত্বাকওয়া এবং সৎ কাজ
এই খিলাফাহ পদ্ধতি যদি মানুষের মাঝে কোন তারতম্য বা পার্থক্য করে তো তা একমাত্র ঈমান, ত্বাকওয়া এবং সৎ কাজের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে ......... কোন রাষ্ট্রের প্রশিদ্ধি বা " ক্ষমতা " নামের কোন পূজনীয় বস্তুর অফাদারীর কারণে নয় । আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
খিলাফতের মধ্যে সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য নাজিলকৃত শরিয়াতের দিকে যেতে হয়, অধিকাংশ মানুষের রায়ের দিকে নয়। যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ-
এই খিলাফাহ পদ্ধতি যদি মানুষের মাঝে কোন তারতম্য বা পার্থক্য করে তো তা একমাত্র ঈমান, ত্বাকওয়া এবং সৎ কাজের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে ......... কোন রাষ্ট্রের প্রশিদ্ধি বা " ক্ষমতা " নামের কোন পূজনীয় বস্তুর অফাদারীর কারণে নয় । আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। ( হুজুরাত - ১৩)১২ - ফায়সালার উৎস; আল্লাহর শরিয়াত ..... অধিকাংশ মানুষের রায় নয়।
খিলাফতের মধ্যে সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য নাজিলকৃত শরিয়াতের দিকে যেতে হয়, অধিকাংশ মানুষের রায়ের দিকে নয়। যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ-
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ
আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের
পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন;
তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না (মায়েদাঃ ৪৯)
0 মন্তব্যসমূহ