অসীম মানসিকতার কষ্টিপাথর (২):
"ক্রমাগত মানোন্নয়ন চালিয়ে যাওয়া"
=====================================================
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيم
إِنَّ الْحَمْدَ لِلّٰهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنْ شُرُوْرِ أنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللّٰهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَنَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَنَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُه . أمابعد
মাকসাদ: অসীম মানসিকতার মৌলিক একটি উপাদান হলো-ক্রমাগত মানোন্নয়ন করে যাওয়া, একই সঙ্গে এটি অসীম মানসিকতা পরখ করার কষ্টিপাথরও বটে।
মানোন্নয়নের পূর্বশর্ত, মানোন্নয়নের মৌলিক দুটি পদ্ধতি, এবং মানোন্নয়নের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সুবিন্যস্ত নির্দেশনা প্রদান করাই এ সবকের মাকসাদ।
◾ ক্রমাগত মানোন্নয়ন করে যাওয়া
অসীম মানসিকতার দ্বিতীয় উপাদান ক্রমাগত মানোন্নয়ন করে যাওয়া। মানোন্নয়ন কীভাবে করব? মানোন্নয়ন দুইভাবে করা হয়-
১। অতীতের ভুলগুলো ও দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা। এরপর তা সংশোধন করা এবং একই ভুলের পুনুরাবৃত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ : " لَا يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ "(رواه البخاري في كتاب الآداب. رقم:٦١٣٣)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- "মুমিন এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয়না"। (সহীহুল বুখারী:৬১৩৩)
মানোন্নয়নের এই প্রথম পদ্ধতি তখনই কার্যকর হবে যখন আমরা বাস্তবতা বিবর্জিত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ঝেড়ে ফেলে বাস্তবতাকে গ্রহণ করে নেব। কোনো বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ মানুষেরও ভুল হতে পারে, মানুষ হলো ইনসান। ইনসানের বৈশিষ্ট্যই হলো ভুল করা, ভুলে যাওয়া। কাজেই আমার বা আমাদেরও ভুল হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। ইটস ওকে টু ফেইল।
আমি কখনো হারতে পারি না, ভুল হলে সরাসরি নিজের ভুল স্বীকার না করে ইনিয়ে বিনিয়ে অন্যের দিকে ইঙ্গিত করা- আমাদের সমাজে অনেক মানুষের এমনকি দ্বীনি ভাইদের মাঝেও অনেকের এমন মানসিকতা থাকে। এমন ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যার মুখোমুখি হয়। পাশাপাশি জামায়াতবদ্ধ থাকলে সেই জামায়াতের মাঝেও সমস্যা তৈরি করে। নিজের প্রতি প্রবল আত্মবিশ্বাসের কারণে সে কখনোই বুঝতে পারে না বা চায় না যে তার কোন পদক্ষেপ ভুল।
একটি বিষয় মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতে হবে।
ক) আমি কখনো ভুল করতে পারি না, আমি সব সময় বিজয়ী হব।
খ) মাঝে মাঝে আমার ভুল হতে পারে এটা সত্য। এই বিষয়টি আমি গ্রহণ করে নিলাম। কিন্তু আমি বোধহয় আর সেই ভুলগুলো সংশোধণ করতে পারব না।
গ) আমরা সাময়িকভাবে
পরাজিত হয়েছি। আমাদের এখন পতনের কাল চলছে। কিন্ত সত্যি বলতে আমরা আসলে
একেবারেই হেরে গিয়েছি। আমাদের আর কখনো উত্থান কাল আসবে না ।
ঘ)
ভুল হচ্ছে তা বুঝতে পারলেও তা স্বীকার করে নেব না। কারণ এর ফলে আমার
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আমাদের পরাজয় ঘটেছে এমন বার্তা যেতে পারে।
এই সবগুলো বিষয়ই হলো পরাজিত ও সসীম মানসিকতার উদাহরণ।
শুধু ভুল স্বীকার করাটাই অসীম মানসিকতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট না। বরং-
ক) আমার ভুল হতে
পারে। আমি ভুলগুলো জীবনের অংশ হিসেবে নিয়ে তা সংশোধনের চেষ্টা করব।
ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।
খ) আমাদের এখন পতনের
কাল চললেও অবস্থা চিরকাল এমন থাকবে না। আমাদের উত্থানের যুগও আসবে ইনশা
আল্লাহ। তাই হাল ছাড়ব না। হতাশ হব না। আল্লাহর উপর ভরসা করে আমার পক্ষে
সম্ভাব্য যা যা করা সম্ভব তা করে যাব।
এগুলো হলো বিজয়ী মানসিকতা বা অসীম মানসিকতা অর্জনের উপাদান।
আবার আমরা অনেক সময় তাত্ত্বিকভাবে বলি -
আমার ভুল দেখলে সেগুলো ধরিয়ে দেবেন ইনশা আল্লাহ। কিন্তু কোনো ভাই যখন আমার
ভুল ধরিয়ে দেয়- তখন আমরা সেটা গ্রহণ করতে পারি না। এটা যে আমার ভুল তা
স্বীকার না করে বিভিন্ন অযুহাত পেশ করি- অমুক ভাইয়ের কারণে তমুক সমস্যা
হয়েছে।
হাল ছাড়ব না মানে ভুল স্বীকার করব
না-এমনটি নয়। ভুল স্বীকার করব। ভুল সংশোধন করব। সাময়িক পরাজয় মেনে নেব,
কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসীম লড়াই এর ময়দানে লড়াই চালিয়ে যাব- এটাই হলো
প্রকৃত অসীম মানসিকতা।
২। সমস্যা হবার পূর্বেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সতর্কতামূলক/প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা
১ নং পয়েন্টে আলোচিত- সমস্যা হয়ে যাবার
পর তা খুঁজে বের করে সমাধান করা- এই কাজগুলো হলো রিয়েক্টিভ কাজ। রোগ হবার
পর ওষুধ খেয়ে রোগ সারানোর মতো। স্বভাবতই এই রিয়েক্টিভ কাজের চাইতেও অধিক
গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রোএক্টিভ কাজ। অর্থাৎ রোগাক্রান্ত হবার পূর্বেই
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন- যে সমস্যা বা ত্রুটিগুলো আমাদের
তানজিমে এখনো অনুপস্থিত, যে ত্রুটিগুলো কোনো একটি দলে বিদ্যমান থাকলেও তা
খুঁজে বের করা কঠিন- আমরা এমন সমস্যাগুলো আগেই চিহ্নিত করে রাখব এবং আমাদের
অসীম পথে পথচলায় যেন এ সমস্যাগুলো প্রতিবন্ধক হিসেবে আবির্ভূত হতে না পারে
সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করব।
যেমন- উত্থান-পতনের বিষয়টি। যখন আমাদের
পতন হবে তখন যেন খুব বেশি না হয়, আবার যখন উত্থান হবে তখন উত্থানটা যেন
অনেক বেশি হয়। এই সুরত নিশ্চিত করার জন্য আমাদের আগে থেকে অর্থাৎ
প্রোএক্টিভ হয়ে কাজ করতে হবে।
মূল কথা হলো, সাধারনভাবে মানোন্নয়নের
জন্য প্রোএক্টিভ পদ্ধতিতে এবং সমস্যা সংঘটিত হয়ে গেলে রিয়েক্টিভ পদ্ধতিতে এ
দুইভাবেই কাজ করে যেতে হবে। এই দুই পদ্ধতিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
নিজেদের ভুলগুলো খুঁজে বের করে সংশোধন করা এবং ভুল বা সমস্যা হবার আগেই
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, উভয় পদ্ধতিতেই আমাদেরকে ক্রমাগত
মানোন্নয়ন করে যেতে হবে এবং এসব বিষয়ে ভুল ও সসীম মানসিকতাগুলো বর্জন করে
সঠিক ও অসীম মানসিকতা লালন করতে হবে।
ওয়াল্লাহু তায়ালা আ'লাম।
0 মন্তব্যসমূহ