আমরা কীভাবে বুঝবো যে আমরা সঠিকভাবে দ্বীন পালন করছি?

 আমরা কীভাবে বুঝব যে আমরা সঠিকভাবে দ্বীন পালন করছি?



 ১. কুরআনের সাথে নিজের আমল মেলানো

 قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“বলো, আমার নামাজ, কোরবানি, জীবন ও মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য, যিনি সব জগতের প্রতিপালক।”

(সূরা আল-আন‘আম ৬:১৬২)


 অর্থাৎ আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজ যদি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় — তাহলে আমরা সঠিক পথে আছি। যদি তাতে মানুষের প্রশংসা, দলীয় স্বার্থ, রাজনৈতিক লাভ, বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্য মিশে যায় — তবে দ্বীন বিকৃত হয়ে যায়।


 ২. রসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহর সাথে মেলানো

 مَن عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

“যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের নির্দেশের (সুন্নাহর) উপর নয় — তা প্রত্যাখ্যাত।”

(সহীহ মুসলিম ১৭১৮)


দ্বীন পালন মানে নিজের মতো বা সমাজের মতো নয়, বরং নবী ﷺ-এর মতো পালন করা। সালাত, রোযা, দাওয়াত, জিহাদ — সবকিছু তাঁর নির্দেশ ও পদ্ধতিতে হতে হবে।


৩. আকীদা (বিশ্বাস) সঠিক থাকা

فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

“যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।”

— সূরা কাহফ ১৮:১১০


দ্বীন সঠিকভাবে পালনের প্রথম শর্ত হলো তাওহিদ বিশুদ্ধ থাকা —কোনো ব্যক্তি, দল, বা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আল্লাহর শাসনের সমকক্ষ না করা। আজ অনেকেই দ্বীন পালন করে কিন্তু গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, মানব-রচিত আইন মেনে চলে —এগুলো কুরআনের দৃষ্টিতে শিরক ও বিদআত।


 ৪. অন্তরের অবস্থা যাচাই করা

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ

“নিশ্চয় আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের (পরহেজগারদের) আমলই গ্রহণ করেন।”

(সূরা আল-মায়িদাহ ৫:২৭)


বাহ্যিক আমল যতই সুন্দর হোক, যদি অন্তর বিনয়, খুশু ও তাকওয়াহীন হয়,

তাহলে আমল গ্রহণযোগ্য হয় না।তাই নিজের নিয়্যাত (উদ্দেশ্য) সবসময় বিশুদ্ধ রাখতে হবে।


 ৫. দ্বীনের পূর্ণতা স্বীকার ও বাস্তবায়ন করা

 ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً

“তোমরা সবাই পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ কর।”

( সূরা আল-বাকারা ২:২০৮)


 দ্বীনকে টুকরো টুকরো করা যাবে না —

শুধু ইবাদত নয়, রাজনীতি, বিচার, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজনীতি —

সবক্ষেত্রে কুরআনের হুকুম মানতে হবে।


৬. সমাজে ইসলামের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা

 الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ

“যাদের আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা দেই, তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয়, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে।”

(সূরা হজ্জ ২২:৪১)

সঠিকভাবে দ্বীন পালনের লক্ষণ হলো —শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করা।

সংক্ষেপে মূল্যায়নের ৬ মানদণ্ড

১️)তাওহীদ---- আমি কি কেবল আল্লাহর আইন ও হুকুম মানি?

২️) সুন্নাহ--- আমার আমল কি নবী ﷺ-এর পদ্ধতিতে হচ্ছে?

৩️)  নিয়্যাত---- আমি কি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করছি?

৪️) তাকওয়া---- আমি কি গোপনে আল্লাহকে ভয় করি?

৫️) পূর্ণতা--- আমি কি ইসলামের সব দিক মেনে চলছি?

৬️)দাওয়াত--- আমি কি সমাজে ইসলামের বিজয়ের জন্য কাজ করছি?

0 মন্তব্যসমূহ