অসীম দ্বন্দ্ব বনাম সসীম দ্বন্দ্ব; অসীম মানসিকতা বনাম সসীম মানসিকতা : পরিচিতি ও প্রকৃতি

 

অসীম দ্বন্দ্ব বনাম সসীম দ্বন্দ্ব;

অসীম মানসিকতা বনাম সসীম মানসিকতা :

পরিচিতি ও প্রকৃতি 


=====================================================

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيم

  إِنَّ الْحَمْدَ لِلّٰهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنْ شُرُوْرِ أنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللّٰهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَنَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَنَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُه .  أمابعد

 

 

মাকসাদ: আমাদের এ সবকের মাকসাদ হলো - অসীম দ্বন্দ্ব ও সসীম দ্বন্দ্বের পরিচয় ও গতিপ্রকৃতি জানা। একই সঙ্গে সসীম মানসিকতার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা  এবং অসীম মানসিকতা ধারণের মাহাত্ন্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়াও এই সবকের মাকসাদ। 


 

আমাদের এই দাওরায় ঘুরে ফিরে দুইটি শব্দ বারবার আসবে। একটি হলো "ইনফিনিট" - যার  বাংলা অর্থ হচ্ছে অসীম। অন্য শব্দটি হলো "ফাইনাইট" – যার বাংলা অর্থ হচ্ছে সসীম। 


শুরুতে জেনে নেওয়া যাক সসীম দ্বন্দ্ব  কী?


সসীম দ্বন্দ্ব বুঝাতে সসীম একটি খেলার উদাহরণ দেই। মনে করুন, ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা থেকে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট একটি স্টেডিয়ামে দুটি ফুটবল টিম পরস্পর মুখোমুখি হল। এখানে ফিফা থেকে আগেই সব নিয়ম-কানুন নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। এখন যেই প্রতিপক্ষ ফুটবলের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে বেশি গোল দিবে, সেই বিজয়ের মুকুট পড়বে। আর যারা কম গোল দিবে তারা হেরে যাবে। খুব সহজ হিসাব। সসীম দ্বন্দ্বটা ঠিক এমন।

 

অসীম দ্বন্দ্ব কী? 


অসীম দ্বন্দ্ব বোঝাতে আমরা হক-বাতিলের সংঘাতের উদাহরণ দিতে পারি। সৃষ্টির সুচনা থেকেই এ যুদ্ধ চলমান, আর কিয়ামত পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে। সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মে এ সংঘাতকে বাঁধা যায়না। ফুটবল খেলা কিংবা কুস্তি করার মতো উভয়পক্ষ পূর্বনির্ধারিত সমস্ত নিয়ম মেনে চলবে - এমন কল্পনাও এখানে করা যায়না। বরাবরই এখানে নিত্যনতুন কৌশলের উদ্ভব হয়েছে, নতুন করে বারবার নিয়ম ও কৌশল বদলেছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়া মাত্রই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমাপ্তিও ঘটেনি। এখানে প্রতিপক্ষও সুনির্ধারিত নয়। দুজন মানুষ যদি কুস্তি করে, মাঝখান থেকে তৃতীয় কেউ এসে একপক্ষকে জিতিয়ে দিতে পারবেনা। এখানে পক্ষ-বিপক্ষ সুনির্ধারিত। কিন্তু যুদ্ধের বিষয়টা দেখুন....এখানে প্রতিপক্ষ সুনিশ্চিতভাবে নির্ধারিত না। কে কখন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে সেটা নির্ধারণ করা কঠিন...বনু কুরাইজা চুক্তিবদ্ধ ছিলো, মদীনার প্রতিরক্ষা করার অঙ্গীকার করেছিলো তারা, অথচ তারাই আহযাবের যুদ্ধে শত্রু হয়ে গেছে, মুসলমানদের পেছন থেকে ছুরি মেরেছে। অসীম দ্বন্দ্ব ও অসীম দ্বন্দ্বের অংশগুলো এমনই হয়......এটা দুজন কুস্তিগীরের কুস্তি খেলা নয় কিংবা দুটি টিমের ফুটবল খেলা নয়। এটা ফাইনাইট বা সসীম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ নয়।

 

এখন দেখা যাক সসীম মানসিকতা কী এবং অসীম মানসিকতা কী?
 

২০০১ সালে ৯/১১ এ টুইন টাওয়ার এ হামলার পর  অ্যামেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে। তবে এই আক্রমণে অ্যামেরিকার সঙ্গে ন্যাটোও ছিল। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য অ্যামেরিকা। সেইসঙ্গে ন্যাটো জোটের সাথে প্রায় ৪০ টির মতো দেশ ছিল। তারা সবাই মিলে এমন এক জাতিকে আক্রমণ করে যারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বলতম ও দরিদ্র জাতির মধ্যে একটি। আক্রমণকারীরা এমন একদল ছিল যারা প্রযুক্তির উন্নতির কারণে যেমাত্রায় বিশ্ববাসীকে শোষণ করছে তা ইতিহাসের অন্য কেউ করতে পেরেছে বলে আমাদের জানা নেই।   


২০০১ থেকে ২০২১- এই অসম যুদ্ধ চলেছে প্রায় ২০ বছর। যুদ্ধের যতো পরিসংখ্যান আছে তার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, ন্যাটো জোট সব দিকে এগিয়ে ছিল। ন্যাটো জোট এবং তালেবানদের শক্তি বা ক্ষমতার ব্যবধান এতোই ব্যাপক যে তা তুলনা করার মতোও না। মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিলেও দেখা যাবে, ন্যাটো জোটের তুলনায় তালেবানদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুগুন বেশী।  


কিন্তু এতো ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা থাকার পরেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছে মুসলিমরা। এর পেছনে মূল কারণ কী ছিল ? কোন সে 'এক্স ফ্যাক্টর' যেখানে  মুসলিমরা অ্যামেরিকা ও ন্যাটো জোট থেকে এগিয়েছিল? 


সেই এক্স ফ্যাক্টরটি হচ্ছে- অ্যামেরিকা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছিলো কয়েক দিন, কয়েক মাস বা কয়েক বছরের জন্যে। তাদের টার্গেট ছিল নিজেদের পছন্দমতো আফগানিস্তানের পুনর্গঠন। তারা আসবে, কয়েক বছর থাকবে, তালেবানদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তাদের পছন্দের কাউকে ক্ষমতায় বসাবে। তারপর আফগানিস্তান ত্যাগ করবে। দম্ভোক্তি করে করে তারা এসব কথাবার্তা মিডিয়াতেও বলেছিল। মার্কিনীদের এই মানসিকতা আসলে সসীম মানসিকতারই বহি:প্রকাশ ছিলো। সসীম মানসিকতা নিয়ে তারা অসীম দ্বন্দ্বের একটি অঙ্গনে ঢুকে পড়েছিলো।


অন্যদিকে তালেবানদের মানসিকতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।তাদের মানসিকতা ছিল আমাদের এই যুদ্ধ কুফরের বিরুদ্ধে ঈমানের যুদ্ধ, হক-বাতিলের সংঘাত চিরন্তন, আমাদের এ জিহাদ তারই একটি অংশ। আমরা আজীবন-আমরণ এ চিরন্তন লড়াইয়ে হকের পক্ষে লড়াই করেই যাবো। তাই আমাদের যুদ্ধ চলবেই। ২০ বছর যুদ্ধ করার পর যদি আরও ২০ বছর যুদ্ধ করতে হয়;তবুও আমরা যুদ্ধ করে যাব। তালেবানদের মাঝে যুদ্ধ ক্লান্তির কোনো ছাপ ছিলো না।
 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সাথে তালেবানদের প্রাথমিকভাবে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যদিও বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর চুক্তিটি  বহাল থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে বেশকিছু আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। যাইহোক, ট্রাম্পের সাথে সেই চুক্তি সম্পাদনকালীন সময়ে তালেবানদের মন মানসিকতা কেমন ছিল ? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় তৎকালীন তালেবান নেতাদের সাক্ষাৎকার থেকে। তালেবানরা এমন সাক্ষাৎকার দেন যে- এই যুদ্ধ যদি আরও ২০ বছর চলে সমস্যা নেই, আমরা জিহাদ করতেই পছন্দ করি। 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার ক্ষমতার শেষের দিকে ২০১৬ সালে  এক বক্তব্যে বলেছিল, "I don't want to paint too rosy a picture. The situation in Afghanistan is still tough. War has been a part of life in Afghanistan for over 30 years. The U.S cannot eliminate the Taliban or end violence in that country," 
অর্থাৎ "আমি খুব বেশি চমৎকৃত কথা শোনাতে চাই না। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখনও জটিল। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের নির্মূল করতে বা সে দেশে সংঘাত বন্ধ করতে পারবে না।" 

ট্রাম্পের মুখেও একই ধরণের বক্তব্য শোনা যায়। সে সময় ট্রাম্পের বেশ কিছু বক্তব্য ভাইরাল হয়। তালেবানদের ব্যাপারে তার একটি বক্তব্য ছিল এমন- তাঁদের কাজই যুদ্ধ করা। আমরা যেমন প্রতি বছর ফুটবল খেলি, তাঁরাও তেমন বছর বছর যুদ্ধ করে। এটিই তাঁদের কাজ, এটিই তাঁদের পছন্দের বিষয়। 


সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন জেনারেলের বেশ বিখ্যাত একটি বক্তব্য আছে। সেই জেনারেল বলেছিল- তাঁরা আমাদের বন্দুকের নলের নিচে জান্নাত দেখে। তাঁদের সাথে আমরা কি যুদ্ধ করব? 


বাস্তবতা হলো এমন মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। একদল মানুষের মানসিকতা এমন যে, যতো দীর্ঘ সময়ই হোক না কেন, যতোদিন যুদ্ধ করা দরকার আমরা যুদ্ধ করে যাব। যুদ্ধের মাঝেই সেই দলের মানুষ আনন্দ ও প্রশান্তি খুঁজে পায়। এমন দলকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।
 

অনন্তকাল যুদ্ধ চালিয়ে যাবার এই অসীম মানসিকতা বা ইনফিনিট মাইন্ডসেটই ছিল সেই 'এক্স ফ্যাক্টর'। ন্যাটো জোট এবং আসবাবি দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র অ্যামেরিকা ও পৃথিবীর অন্যতম দুর্বলতম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে পার্থক্য ছিল এই মানসিকতাতেই। তালেবানরা লড়াই এর ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এই মানসিকতা নিয়েই যে – এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। 


হক বাতিলের লড়াই চিরন্তন। আদম আলাইহিস সালাম ও ইবলীস শয়তানের মধ্যে যে লড়াই শুরু হয়েছে তা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। একজন মুসলিমকে ব্যক্তি জীবনেও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত  ঈমান ও কুফরের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। শয়তান শেষ মুহূর্তেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়। মুসলিমদের লড়াই অনন্তকালের। আপনি যতোদিন জীবিত থাকবেন আপনার যুদ্ধ চলবেই। শত্রুপক্ষ পরিবর্তন হবে কিন্তু লড়াই জারি থাকবে। 


ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। একসময় মুসলিমদের প্রধান শত্রু ছিল রোমান ও পার্সিয়ানরা। এরপর যুগে যুগে শত্রু পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় ব্রিটিশ ও ফ্রান্স ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় শত্রু ইসরায়েল, অ্যামেরিকা। এক সময় ইসরায়েল  নামে কোনো দেশই ছিলো না। কিন্তু এখন তারা আমাদের প্রধানতম শত্রু। 


আমাদের যুদ্ধ শুধু শারীরিক লড়াইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই যুদ্ধের শেষ নেই। কিন্তু আমরা এই অনন্ত যুদ্ধকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলি। আমরা ভাবি, আগামী ৫ বা ১০ বছর পর আমরা উপমহাদেশ বিজয় করে ফেলব। ঠিক একই সময়ে সোমালিয়া, মালিসহ আফ্রিকা জয় করে ফেলব। এর ১৫ বছর পর  ইউরোপ আক্রমণ করব। এরপর ধীরে ধীরে শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরি করে অ্যামেরিকার মূল ভূখন্ডে আক্রমণ। এভাবে পৃথিবী বিজয় করে ফেলব। অর্থাৎ আমরা ৪০-৫০ বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হই। বাস্তবতা হচ্ছে- এই যে যুদ্ধ, যা শুরু হয়েছে আদম আলাইহিস সালামের সময় থেকে-এই যুদ্ধ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। এর আগে আমরা শত্রুকে একদম নির্মূল করে ফেলব- এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌ তায়ালা দুনিয়াতে সবসময় কাফেরদেরকে বিরাজমান রাখবেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য। এই বিষয়টি কিন্তু আমরা সবাই জানি এবং বিশ্বাসও করি। 

 

কিন্তু এরপরেও আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের কথা মাথার রেখে আমাদের সকল চিন্তাফিকির সাজাই। এটা হচ্ছে সসীম মানসিকতা। আমরা যদি বিশ্বাস করে  থাকি যে কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে, তাহলে কিভাবে আশা করি ১৫ বছর পরে বা ৫০ বছর পরে আমরা পুরো পৃথিবী বিজয় করে নেব? তাহলে আমরা কি বলতে চাচ্ছি যে, আমাদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত হয়ে যাবে?


হ্যাঁ, এটি সত্য যে কিয়ামতের অনেক লক্ষণ দৃশ্যমাণ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সময়ই নিশ্চিত কিয়ামত হয়ে যাবে, এধরণের চিন্তা ফিকির করা ঠিক নয়। হয়ত আমরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারি, হয়ত ইমাম মাহদিকেও পেয়ে যেতে পারি, আবার নাও পেতে পারি।


কিন্তু "আমাদের জীবদ্দশায় কিয়ামত হয়ে যাবে" এমন কথা বলা তো ঠিক নয়।

 

তো, কিয়ামত পর্যন্ত  কুফফাররা থাকবে, ঠিক তেমনিভাবে মুমিনরাও থাকবে। মুমিনরা যেমন  নির্মূল হবে না, তেমনিভাবে কুফফাররাও নির্মূল হবে না। কিয়ামতের আগে আগে একটা কোমল বাতাস পাঠিয়ে আল্লাহ তায়ালা সকল মুমিনের জান কবজ করে নিবেন, আর এরপর কাফেরদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।


আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন,

 

ذَٰلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ ۗ 

‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান’। [সুরা মুহাম্মাদ, ৪৭: ০৪]


যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে তো আসলে সব হয়ে যেত। আমাদের কিছুই করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সুন্নাহ এটিই যে, আল্লাহ্‌ তায়ালা মানবজাতির এক দল দ্বারা অপর দলকে পরীক্ষা করবেন। কুফফারদের দ্বারা আমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। আর যদি কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদ জারি থাকেই এবং অবশ্যই জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেই, তাহলে জিহাদের শর্ত পূরণের জন্য কুফফারদের থাকতে হবে। আল্লাহ্‌ মাফ করুন, মুসলিমদের অভ্যন্তরীন ঝগড়া-বিবাদ-মারামারিকে তো আর জিহাদ হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না।
  

আমরা সব সময় আমাদের লক্ষ্যকে "সুনির্দিষ্ট গন্ডিবদ্ধ" করতে চাই। একটি নির্দিষ্ট সময়ের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করতে চাই।


হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা থাকবে, কিন্তু আমাদের এটিও বুঝতে হবে- 


১। একেবারে পরিপূর্ণ প্ল্যানিং সম্ভব নয়
২। (ভবিষ্যতের কোনো ফলাফল কিংবা ঘটনার) সময়কে সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। 

 

প্রকৃতপক্ষে আমরা অত্যন্ত দুর্বল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার মত কোন ব্যবস্থা আমাদের হাতে আপাতত নেই। সুনির্দিষ্ট ও পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। সুন্দর গোছালো ভাবে কাজ করা, সময়, সুযোগ ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে আমাদের নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা প্রয়োজন এটি সত্য। তবে তার মানে এমন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নয় যে, আগামী ৫ বছর বা ৭ বছর বা ১০ বছরের মধ্যে আমাদের এই এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। না হলে আমি তাঞ্জিমের উপর আস্থা রাখতে পারব না ! উমারাদের কাছে জবাবদিহিতা চাইবো বারবার ! বারবার এব্যাপারে ইশকাল জানাবো ! সন্তুষ্ট হতে পারবো না ! তাঞ্জিমের স্ট্র্যাটেজিকে ভ্রান্তিপূর্ণ মনে করবো ! তাই, এ ধরনের অবাস্তব ধারণা এবং সসীম মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী। সাধ্যমত সঠিক এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার আলোকে অসীম মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।


জিহাদের কণ্টকাকীর্ণ পথে চলতে হলে আমাদের মানসিকতা হতে হবে অসীম। লড়াই আজীবন জারি থাকবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন লাশ হওয়া পর্যন্ত আমরা এই পথ চলা অব্যাহত রাখব- আমাদের মানসিকতা হতে হবে এমন অসীম।
শায়খ ইউসুফ আল 'উয়াইরি রাহিমাহুল্লাহ যেমনটি বলেছেন,


"তোমাকে অবশ্যই তোমার সেনাদের মাঝে যে কিতাল তারা শুরু করেছে তার শরয়ী নীতিমালাসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। এমন ব্যক্তিকে এখানে নিয়ে এসো না, যে শুধু আবেগ নিয়ে এসেছে। বরং যে এসেছে আকিদা ও নীতিমালা নিয়ে, সেই হলো ওই ব্যক্তি, যাকে তোমার প্রয়োজন, আর নিশ্চয়ই সে এই পথে আমৃত্যু তোমার যাত্রার সঙ্গী হবে। যাদেরকে আনা হয়েছে একটি স্বপ্নের সাথে, তারা ফিরে যাবে আরেকটি স্বপ্নের সাথে। আর যাদেরকে আনা হয়েছে আকিদার সাথে, তারা কোনোদিনও প্রত্যাবর্তন করবে না, একমাত্র লাশ হওয়া ব্যতীত।"

 

উপসংহার: সসীম দ্বন্দ্বে সসীম মানসিকতা নিয়ে হয়তো অবতীর্ণ হওয়া যেতে পারে, কিন্তু অসীম দ্বন্দ্বে কখনোই সসীম মানসিকতা নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া যাবেনা। অসীম দ্বন্দ্বে টিকে থাকতে হলে, সফল হতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে অসীম মানসিকতার অধিকারী হতে হবে।

 ওয়াল্লাহু তায়ালা আ'লাম।

0 মন্তব্যসমূহ