অসীম মানসিকতার কষ্টিপাথর ১ (ক):
"শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া"
===================================================
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيم
إِنَّ الْحَمْدَ لِلّٰهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنْ شُرُوْرِ أنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللّٰهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَنَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ، وَنَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُه . أمابعد
মাকসাদ:
আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাওয়া একদিকে যেমন অসীম মানসিকতার মৌলিক উপাদান,
তেমনি অন্যদিকে এটা অসীম মানসিকতার কষ্টিপাথরও। অর্থাৎ, এই উপাদানটি আমার
মাঝে আছে কি না - এটা দেখে যাচাই করা যাবে আমি অসীম মানসিকতার অধিকারী কি
না।
এ বিষয়গুলো বোঝাই এ সবকের মাকসাদ।
কোন বিষয় বা উপাদানগুলো দেখে বোঝা যাবে আমি অসীম মানসিকতার অধিকারী?
◾ শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া
আমি ব্যক্তিগত জীবনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। এমন কয়েকটি (পাচটি/দশটি) আমল করব যা করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, এরপর আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের উপর আর কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না- বিষয়টি এমন নয়। এ লড়াই/ এ আমল আমৃত্যু চালিয়ে যেতে হবে। যেমনটা করেছেন দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীগণ। রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এমনকি তাঁরাও সব সময় ভয়ে থাকতেন, কখন ভুল করে ফেলেন, আর আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যান! অথচ তাঁরা দুনিয়াতেই জান্নাতের গ্যারান্টি পেয়েছিলেন। তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন হওয়া উচিত? যতক্ষণ আমাদের দেহে রুহ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
আহযাবের যুদ্ধে কুরাইশরা মুসলিমদের
বিপক্ষে একা আসেনি। বরং সমস্ত আরবের সকল শক্তিশালী গোত্রগুলোকে জোটবদ্ধ করে
তারপর এসেছিল। এ যুদ্ধে যখন তারা হেরে গেল, তখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন
করে অভিযানে আসার মতো মানসিক কিংবা সামরিক শক্তি কোনোটাই আর অবশিষ্ট
রইলোনা। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছিলেন একটু
গভীরভাবে লক্ষ্য করুন! তিনি এটা বলেননি - এখন থেকে যেহেতু ওরা আর হামলা
চালাতে পারবেনা তাই আমাদেরও আর লড়াই চালিয়ে যেতে হবেনা...না, তিনি এমনটা
বলেননি... বরং বলেছেন -
اليوم نغزوهم ولا يغزوننا، نحن نسير إليهم
"আজ থেকে আমরা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযান চালাবো, ওরা আর আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করতে পারবেনা, আমরা ওদের অভিমুখে এগিয়ে যাবো। [সহীহ বুখারী:৪১০৯, ৪১১০]
এখান থেকেই আমরা সবক পাই - আমৃত্যু লড়ে যেতে হবে, বিজয়ের তুষ্টিতে থেমে যাওয়া যাবেনা।
আবার উহুদ যুদ্ধের ঘটনা দেখুন।
মুসলিমরা
এ যুদ্ধে কঠিন আঘাতের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু উহুদ যুদ্ধে আহত সাহাবীদের
আঘাত শুকাবার আগেই নতুন যুদ্ধের নির্দেশ আসলো...কুরাইশরা মক্কায় চলে
যাচ্ছিলো-তাদের পশ্চাদ্ধাবন করতে হবে। রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন- এ অভিযানে কেবল তারাই শরীক হবে যারা
উহুদে শরীক ছিলো। হামরাউল আসাদ পর্যন্ত মুসলিমরা কুরাইশ বাহিনীকে তাড়া
করলেন। এ যুদ্ধ হামরাউল আসাদের যুদ্ধ নামে পরিচিত। (দ্রষ্টব্য:তাফসীরে
তাবারী : সুরা আলে ইমরানের ১৭২ নং আয়াতের তাফসীর)
এখান থেকে আমরা শিক্ষা পাই - সাময়িক পরাজয় আসলেও থেমে যাওয়া যাবেনা। আল্লাহ তায়ালা নিজেই উহুদের বিপর্যয়ের পর সুন্নাতুল্লাহ শিক্ষা দিয়ে আয়াত নাজিল করলেন -
وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
"এই দিনগুলো আমি মানুষের মাঝে পালাক্রমে আবর্তন করি" । [সুরা আলে ইমরান ৩:১৪০]
রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের চেয়ে বড় ঘটনা আর কী হতে পারে?
সাহাবায়ে কেরামের জন্য নিজের সমস্ত
স্ত্রী-সন্তান, আত্নীয়-স্বজনের মৃত্যুর ঘটনার চেয়েও বহু বহুগুণে কঠিন ছিলো
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের খবর শোনা। উহুদ যুদ্ধে রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দিলো কাফেররা, তখন
ঘটনার আকস্মিকতায় কয়েকজন সাহাবী একটু হতবিহ্বল হয়ে গেলেও - অন্যান্য
সাহাবীরগণ বলতে শুরু করলেন : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি
শহীদ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি যে দ্বীনের জন্য লড়াই করতে করতে শহীদ হয়েছেন,
আমরাও সে দ্বীনের জন্য লড়াই করেই শহীদ হবো...তাঁর শাহাদাতের সংবাদে তো আমরা
থেমে যেতে পারিনা...
সুবহানাল্লাহ! এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম অসীম মানসিকতার উপর কত দৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠেছিলেন।
আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা সুরা আলে ইমরানে বলেন -
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ ﴿١٤٤﴾
"মুহাম্মাদ তো আল্লাহর রাসুল! তাঁর পূর্বেও অনেক রাসূল বিগত হয়েছেন। যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন কিংবা নিহত হন, তোমরা কি উল্টোদিকে অর্থাৎ কুফুরিতে ফিরে যাবে? যে ব্যক্তি উল্টোদিকে ফিরে যাবে, সে তো আল্লাহর কোনো ক্ষতিই করতে পারবেনা। আর আল্লাহ তায়ালা প্রতিদান দিবেন কৃতজ্ঞদেরকে"। [ সুরা আলে ইমরান ৩:১৪৪]
উপসংহার: মনে রাখতে হবে, কখনোই থেমে যাওয়া যাবেনা। কখনোই ঝরে যাওয়া যাবেনা। জয় কিংবা পরাজয় যাই আসুক না কেন, সর্বদাই এই উম্মাহকে তাওহীদের উপর অটল থেকে শিরক ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে আদর্শিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আর উম্মাহর সদস্যরা আমৃত্যু এই উম্মাহর পক্ষে এ লড়াইয়ের অংশ হয়ে থাকতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ ও সীরাত থেকে এ শিক্ষাই আমরা পাই।
ওয়াল্লাহু তায়ালা আ'লাম।
0 মন্তব্যসমূহ