একালে তুমুল ফি*তনার সময়ে একজন কিভাবে জীবন কাটাবে?

   একালে তুমুল ফি*তনার সময়ে একজন কিভাবে জীবন কাটাবে?



তার পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা রব্বে কারীম কুর‌আনুল কারীমে দিয়েছেন। কুর‌আনী ফর্মুলা মেনে চললে আজ‌ও আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসহাবে কাহাফের মতো আসমানী সুরক্ষা লাভ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। 

আল্লাহ তা'আলা যেসব অপূর্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে আসহাবে কাহফের যুবকদের হেফাজত করেছেন। বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন, তা নিম্নরুপ দেওয়া হলো :


১. দোয়া :

- যুবকদল দোয়া করেছিলেন, 

“হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের প্রতি আপনার নিকট থেকে বিশেষ রহমত  নাযিল করুন। এবং আমাদের এই পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কল্যাণকর পাথেয় ব্যবস্থা করে দিন।” [১০]

২. ঈমান :

- যুবকদল আন্তরিক ভাবে ঈমান এনেছিলো।

তারা ছিলো একদল যুবক, যারা  নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিলো এবং আমি তাদেরকে হিদায়াত প্রভূত উৎকর্ষ দান করেছিলাম। [১৩]


৩. তাওহীদ :

- তারা এক আল্লাহকে ইলাহ মেনে নিয়েছিলো। বাকি সব ভ্রান্ত উপাস্যকে সম্পূর্ণ রুপে বর্জন করেছিলো।

“আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিক। আমরা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে কখনই ডাকব না। তাহলে তো আমরা চরম অবাস্তব কথাই বলব।” [১৪]

৪. বিশুদ্ধ-চিন্তা :

- এমন ঘোরতর জাহেলী সমাজে বাস করেও যুবকদল বিস্ময়করভাবে  বিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারী ছিলো। চারদিকে পাপাচার, অনাচার তাদের চিন্তার সঠিক গতিপথ ব্যাহত করতে পারেনি। 

“এই আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁর পরিবর্তে আরও বহু মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে। (তাদের বিশ্বাস সত্য হলে) তারা নিজ মাবুদদের সপক্ষে স্পষ্ট কোন প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” [১৫]


৫. ফিতনা এড়িয়ে চলা :

- ফিতনার জায়গা থেকে সরে যাওয়া। ফিতনা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলা।

“(সাথী বন্ধুরা!) তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকেও, তখন চলো, ওই গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য নিজ রহমত বিস্তার করে দেবেন এবং তোমাদের বিষয়টা যাতে সহজ হয় সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।” [১৬]


৬. ইবাদত : 

- “আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে” [১৬]

বাসীরাহ-‌ইবরাহ : অর্থাৎ তারা অন্যদের ভ্রান্ত পূজা করে না। আল্লাহর ইবাদত ই বেছে নিয়েছিলো।

৭. ইস্তেশারা ও মুশাওয়ারা :

- তাদের ঘটনা থেকে বোঝা গেছে, তারা সব বিষয়ে পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো।

“তাদের মধ্যে একজন বলল, তোমরা এ অবস্থায় কতকাল থেকেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা একদিন বা তার কিছু কম (ঘুমে) থেকে থাকব। অন্যরা বলল, তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন তোমরা এ অবস্থায় কতকাল থেকেছ। এখন নিজেদের কোন একজনকে রূপার মুদ্রা দিয়ে নগরে পাঠাও। সে গিয়ে দেখুক তার কোন এলাকায় ভালো খাদ্য আছে এবং সেখান থেকে তোমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসুক। সে যেন সতর্কতার সাথে কাজ করে এবং সে যেন তোমাদের সম্পর্কে কাউকে অবহিত হতে না দেয়।” [১৯]

বসীরাহ-‌ইবরাহ : তারা একে অপরের কাছে মতামত জানতে চেয়েছেন।  মনগড়া মতামত দেননি।

৮. ইলমকে আল্লাহর দিকে তাফবীদ করা :

- যা জানা নেই তা আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা।মুমিননের সব কিছু তো আল্লাহ কে ঘিরেই হবে। কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ জানা থাকলে‌ও , কথা শেষে আল্লাহু আলাম (আল্লাহ ভালো জানেন) বলা নিরাপদ। 

আর কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে লা আদরি (আমি জানি না)  বলা উত্তম।

“অন্যরা বলল, তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন তোমরা এ অবস্থায় কতকাল থেকেছ।” [১৯]

৯. হেকমত :

- এতোদিন পর জেগে উঠেছে তবুও আড়মোড় ভেঙে সবাই হুড়মুড় করে বেড়িয়ে পরেনি। বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে একজনকে পাঠিয়েছে।

“এখন নিজেদের কোন একজনকে রূপার মুদ্রা দিয়ে নগরে পাঠাও।” [১৯]


১০. উত্তম বা হালাল রিযিকের সন্ধান : 

- তিনশ বছরের বেশি সময় পর খাবার খাবেন। তবুও কোনো তাড়াহুড়ো নেই। হালাল রিযিক অন্বেষণে আপোশ নেই। 

“সে গিয়ে দেখুক তার কোন এলাকায় ভালো খাদ্য আছে এবং সেখান থেকে তোমাদের জন্য কিছু ভালো খাবার নিয়ে আসুক। ” [১৯] 

১১. সতর্কতা-কোমলতা : 

- যুবকদল অত্যন্ত সতর্কতা আর সহনীয়, নমনীয় ভঙ্গীতে কাজ করেছেন। আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়ে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেননি। জোড় করেও কিছু করতে যাননি। 

“ সে যেন সতর্কতার সাথে কাজ করে এবং তোমাদের সম্পর্কে কাউকে অবহিত না করে। ” [১৯]

তাহলে আমরা কি ফিতনা থেকে বাঁচতে গুহাতে আশ্রয় নিবো? 


উত্তর :

🔹 উপরোক্ত মূলনীতি গুলোর ৭নং ধারাটি কাজৈ লাগাতে হবে। অর্থাৎ অভিজ্ঞজনের কাছে পরামর্শ চাইতে হবে। 

🔹 পরামর্শের  ভিত্তিতেই দ্বীনের পথে চলতে হবে। একাকি বিচ্ছিন্ন বুঝ দিয়ে চলা নিরাপদ নয়।

রব্বে কারীম আমাদের কে আসহাবে কাহফের মতো ফিতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। ঈমানী মৃত্যু দান করুন। মুসলিম হিসেবে ওফাত দান করুন। সালিহিনের সাথে হাশর করান। আল্লাহুম্মা আমিন।


[১০] সূরা কাহফ : ১০

[১৩] সূরা কাহফ : ১৩

[১৪] সূরা কাহফ : ১৪

[১৫] সূরা কাহফ : ১৫

[১৬] সূরা কাহফ : ১৬

[১৭] সূরা কাহফ : ১৭

[১৮] সূরা কাহফ : ১৮

[১৯] সূরা কাহফ : ১৯


— শায়খ আতিক উল্লাহ এর দরসে কুরআন থেকে

0 মন্তব্যসমূহ